ইউক্রেনে হামলার আগে মার্কিন গোয়েন্দারা পূর্বাভাস দিয়েছিল, রাশিয়া তার বিশাল যুদ্ধবিমান বহরের ক্ষমতা দেখাবে। ইউক্রেনের আকাশে আধিপত্য বিস্তার করবে অত্যাধুনিক রুশ যুদ্ধবিমানগুলো। তবে যুদ্ধ শুরুর পর ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও বাস্তবে রূপ নেয়নি মার্কিন গোয়েন্দাদের পূর্বাভাস। রাশিয়ার আপাত ঝুঁকি-প্রতিরোধী আচরণের কারণ কী তা সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারছেন না তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘তারা তাদের নিজস্ব বিমান এবং তাদের নিজস্ব পাইলটদের নিয়ে উচ্চ ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক নয়।’

রাশিয়ার সেনাবাহিনীর তুলনায় সেনা ও গোলাবারুদ কম হওয়া সত্ত্বেও ইউক্রেনের বিমান বাহিনী এখনও উড়ছে এবং এর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখনও কার্যকর বলে মনে করা হচ্ছে । এই বিষয়টি সামরিক বিশেষজ্ঞদের বিস্মিত করছে।

২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধের সূচনার পর, বিশ্লেষকরা আশা করেছিলেন যে রুশ সামরিক বাহিনী অবিলম্বে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী ও আকাশ প্রতিরক্ষা ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া মাত্র ৭৫টির মতো যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে। তবে কিয়েভে হামলার আগে তাদের ধারণা ছিল ইউক্রেন মিশনের জন্য রাশিয়া কয়েক হাজার বিমান প্রস্তুত রেখেছে।

‘রাশিয়ার বিমান বাহিনীর রহস্যময় অন্তর্ধান’ শিরোনামে লন্ডনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান রুসি বলেছে, এটি হবে ‘যৌক্তিক ও ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত পরবর্তী পদক্ষেপ, যেমনটি ১৯৩৮ সাল থেকে প্রায় প্রতিটি সামরিক সংঘাতে দেখা গেছে।’

রাশিয়ার অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের তুলনায় ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো এখনও অনুন্নত। তবে এগুলোই প্রতিরক্ষামূলক পাল্টা হামলা ও স্থল হামলা চালাচ্ছে। রাশিয়ার বিমান এখনও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আকাশসীমা দিয়ে উড়ছে। ইউক্রেনের আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রাশিয়ার বিমানগুলোর জন্য হুমকি এবং স্থল বাহিনীকে সমর্থনে থাকা রাশিয়ান পাইলটদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে সক্ষম।

রুশ যুদ্ধবিমানের ব্যাপক অনুপস্থিতি সম্পর্কে ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রুশ সামরিক বিশেষজ্ঞ রব লি বলেছেন, ‘তারা অনেক কিছু করছে যা বিভ্রান্তিকর।’

তিনি জানান, তার ধারণা ছিল যুদ্ধের সূচনা হবে ‘সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের’ মাধ্যমে।

রব লি বলেন, ‘প্রতিদিন খরচ আর ঝুঁকি বাড়ছে। কিন্তু তারা কাজটি করছে না এবং এর কোনো বাস্তব কারণ ব্যাখ্যা করা সত্যিকারার্থে কঠিন।’

যুদ্ধে রাশিয়ার বিমান বাহিনী ব্যবহারের পরিকল্পনা এখনও স্পষ্ট নয়। বিষয়টি নিয়ে যখন বিভ্রান্তি বিরাজ করছে তখন ইউক্রেন মিত্রদের প্রতি নো ফ্লাই জোন ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন তা প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ এই ঘোষণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি রাশিয়ার সাথে সংঘাতে টেনে আনতে পারে।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা স্থল বাহিনী গঠনের সাথে রাশিয়ান বিমান বাহিনীর সমন্বয়ের অভাবের প্রমাণ দেখেছেন। তাদের নিজস্ব বিমান প্রতিরক্ষা বলয়ের বাইরে একাধিক রাশিয়া তার স্থল বাহিনীর একাধিক ইউনিট পাঠিয়েছে। এতে রাশিয়ার সেনাদের ওপর ইউক্রেনীয় বাহিনীর আক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করেছে। ইউক্রেনীয় বাহিনীর সমরস্ত্রের মধ্যে নতুন সজ্জিত তুর্কি ড্রোন এবং মার্কিন এবং ব্রিটিশ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল রয়েছে

অবশ্য সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে স্থলযুদ্ধের অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে রাশিয়ার বাহিনীর। সেখানে তারা বিমান ও ড্রোন হামলার সাথে স্থলযুদ্ধের কৌশল সমন্বয় করে সফলতা পেয়েছিল। হয়তো সে কারণেই এখনও রাশিয়া তাদের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানগুলো ইউক্রেন হামলায় ব্যবহার করছে না।